দিনাজপুরের বিরামপুরে সীমান্তঘেঁষা এক নিভৃতচারী গ্রাম দেশমা। এই গ্রামেরই এক সাঁওতাল নারী, মেরিনা বেসরা এবছর পেলেন নারী দিবসে অদম্য সফল জননীর পুরষ্কার। কে এই নারী?
বিরামপুরের বিনাইল ইউনিয়নের দেশমা গ্রামের মার্কাস মুরমুর স্ত্রী মেরিনা বেসরা। মার্কাস মুরমু ছিলেন একজন রাজমিস্ত্রী। এই দম্পতির তিনটি পুত্র, মাথিয়াস, মানুয়েল ও শামুয়েল সরেন –
যাঁদের জন্য আজকের এই সম্মাননা। এক ইঞ্চি আবাদী জমিও ছিলো না এ পরিবারটির। ছিল কেবল একটি জীর্ণ কুঁড়ে ঘর। অথচ এই ঘরের ফসল শুনবেন?
বড় ছেলে মাথিয়াস বিজিবিতে হাবিলদার পদে কর্মরত আছেন। মেজো ছেলে মানুয়েল আছেন একটি বেসরকারি এনার্জি কোম্পানীতে, ঢাকায়। ছোট ছেলে শামুয়েল ৩৩ তম বিসিএসে উত্তীর্ণ হন ২০১৩ সালে, বর্তমানে দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলে সিনিয়র সহকারী সচিব হিসেবে কর্মরত আছেন। কেবল শামুয়েল নন, তাঁর স্ত্রী রিসপি সরেনও একজন বিসিএস ক্যাডার। তিনি রাজস্ব বিভাগের সহকারী কমিশনার হিসেবে কর্তব্যরত আছেন।
অভাবের তাড়নায় মিটিমিটি দীপ জলেছে মেরিনার সংসারে। তাই ছেলেদের জন্য খুব বেশি ব্যয় করতে পারেননি। ওঁরা পড়েছে ধানজুড়ি মিশন হোস্টেল স্কুলে, পরে দিনাজপুর সরকারি কলেজে।
কিন্তু এ অভাবের মধ্যেও জীবনযুদ্ধে উৎরে গেছে পরিবারটি। এককালে ঠাঁই না থাকা মেরিনা বেসরা আজ তিন বিঘা জমি চাষ করেন, আছে পাকা একখানা বাড়ি, আর তিনটি শক্তপোক্ত খুঁটি- তিন ছেলেরা।
মেরিনার ভাষ্য, অভাব তাঁর জীবন থেকে বিদায় নিয়েছে। কিন্তু আদিবাসী বলে যে কটাক্ষ, অবহেলা, তা আজও যায়নি আমাদের অনেক মানুষের জীবন থেকে। এই প্রতিষ্ঠা, এই সাফল্য তিনি তাই তাদেরই উৎসর্গ করেন। পিছিয়ে পড়া আমাদের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর জন্য প্রেরণা হয়ে উঠেছেন মেরিনা বেসরা। কেবল তাঁরাই নন, সকলের জন্যই তিনি এক অনন্য দৃষ্টান্ত।
দেশ সেরা জননী মেরীনা বেসরা
RELATED ARTICLES