‘অধিকার, সমতা, ক্ষমতায়ন; নারী ও কন্যার উন্নয়ন’ প্রতিপাদ্য নিয়ে দি খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লি:, ঢাকা (ঢাকা ক্রেডিট)-এর আয়োজনে ও নারী বিষয়ক উপ-কমিটির সহযোগিতায় পালিত হলো আন্তর্জাতিক নারী দিবস-২০২৫। দিবসটি উপলক্ষে আলোচনা সভা ও নন্দিত পাঁচ জন নারীকে সম্মাননা প্রদান করা হয়।
৮ মার্চ, সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় নারী বিষয়ক উপ-কমিটির আহ্বায়ক ও ঢাকা ক্রেডিটের ভাইস-প্রেসিডেন্ট পাপড়ি দেবী আরেং-এর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাইট সেভারসের কান্ট্রি ডিরেক্টর অমৃতা রেজিনা রোজারিও। গেস্ট অব অনার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হলিক্রস সিস্টারস্-এর এরিয়া কোর্ডিনেটর সিস্টার তেরেজা পুষ্প গমেজ সিএসসি।
আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা ক্রেডিটের প্রেসিডেন্ট ইগ্নাসিওস হেমন্ত কোড়াইয়া, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের অন্যতম সভাপতি নির্মল রোজারিও, দি সেন্ট্রাল এসোসিয়েশন অব খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভস্ (কাককো) লি:-এর চেয়াম্যান পংকজ গিলবার্ট কস্তা, দি মেট্রোপলিটন খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লি:’র চেয়ারম্যান আগষ্টিন প্রতাপ গমেজ, তেজগাঁও হলি রোজারি চার্চের পাল-পুরোহিত জয়ন্ত এস. গমেজ, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ওয়াইএমসিএ’র প্রেসিডেন্ট মার্সিয়া মিলি গমেজ, ঢাকা ক্রেডিটের সেক্রেটারি মাইকেল জন গমেজ প্রমুখ।
এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন ঢাকা ক্রেডিটের ট্রেজারার সুকুমার লিনুস ক্রুশ, প্রধান নির্বাহী অফিসার জোনাস গমেজসহ ঢাকা ক্রেডিটের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যবৃন্দ এবং প্রায় ১২শ নারী-পুরুষ।
সভাপতির স্বাগত বক্তব্যে পাপড়ি দেবী আরেং বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রাসঙ্গিক বিষয় চিন্তা করলে দেখবো এখনো আমরা নারী ও কন্যার সম-অধিকার থেকে অন্যান্য দেশের তুলনায় পিছিয়ে আছি। পরিবারে, কর্মক্ষেত্রেসহ সকল জায়গায় নারীদের যদি এগিয়ে নিয়ে না যাই, আমরা যতই আয়োজন করি না কেন, তা বৃথা হবে। এরপরও নারীরা এখন পুরুষের পাশাপাশি সামনের সারিতে চলে আসছে। কিন্তু পুরুষের মতো সম-সুযোগ থেকে এখনো পিছিয়ে রয়েছে। তাই আমাদের সকলের উচিত নারী-পুরুষ অসমতা পরিবর্তন করে সম-মর্যাদা নিয়ে এক সাথে এগিয়ে যাওয়া। তখনই দেশ ও সমাজ আরো বেশি উন্নত ও সুন্দর হবে। এই নারী দিবসে বিশ্বের সকল নারীদের শুভেচ্ছা জানাই।’
গেস্ট অব অনার সিস্টার তেরেজা পুষ্প গমেজ সিএসসি বলেন, ‘নারী দিবসের মূলভাবটি, নারীদের সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সাথে এবং নারীর ক্ষমতায়নের সাথে সামঞ্জস্য। নারী ক্ষমতায়নে ঢাকা ক্রেডিট যে অভ‚তপূর্ব অবদান রেখে যাচ্ছে, তার জন্য সাধুবাদ জানাই। আমি মেয়েদের পড়াশোনার সময় তাদের গঠনের জন্য কাজ করেছি। এই মুহূর্তে আমি আমার সেই কাজের জন্য গর্বিত। যদিও নারীরা অনেক ক্ষেত্রে এগিয়ে গেছে, তারপরও নারীরা বিভিন্ন স্থানে পিছিয়ে রয়েছে। আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে নারী-পুরুষ এক সাথে এগিয়ে যেতে হবে।’
ঢাকা ক্রেডিটের প্রেসিডেন্ট ইগ্নাসিওস হেমন্ত কোড়াইয়া বলেন, ‘বাংলাদেশে নারীরা তেমন নিরাপদ নয়। গণমাধ্যমে চোখ রাখলেই দেখতে পারি নারীরা অনিরাপদ পরিবেশের মধ্যদিয়ে যাচ্ছে। আমাদের নারী ও কন্যাশিশুর উন্নয়নে জোর দিতে হবে।’
‘পরিবার থেকেই নারী সুরক্ষার বিষয় শুরু করতে হবে। পরিবারে নারী ও কন্যাশিশুদের পরিবার থেকেই এগিয়ে নেওয়ার জন্য ভ‚মিকা রাখা উচিত। আপনারা দেখেছেন ঢাকা ক্রেডিট নারীদের জন্য বিশেষ বিশেষ নারীবান্ধব উদ্যোগ নিয়েছে। এরমধ্যে হোস্টেল, পার্লার, জীম, নার্সিং ইনস্টিটিউটসহ নানামুখি উদ্যোগ নিয়েছি। ঢাকা ক্রেডিটে নারীদের নিরাপদ কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। আজ আপনাদের সবাইকে শুভেচ্ছা জানাই’ বলেন প্রেসিডেন্ট কোড়াইয়া।
এ ছাড়াও অন্যান্য বক্তারা বলেন, ‘আমরা দৃষ্টি দিলে দেখতে পারবো যে, ঢাকা ক্রেডিট ও হাউজিং সোসাইটি বড় আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ইতিমধ্যে নারী অধিকার নিশ্চিত করেছে। কর্মসংস্থানেও নারীদের প্রায় ৫০ শতাংশ নারী কর্মী রয়েছে। পুরুষরা বাহিরে একটা নির্দিষ্ট সময় কাজ করেন, কিন্তু নারীরা ঘরে নিরবিচ্ছিন্নভাবে কাজ করতে থাকেন। এরপরও নারীরা অনেক ক্ষেত্রে অবহেলার শিকার। যতদিন নারীদের সম-অধিকার নিশ্চিত না করে নারী-পুরুষ এক সাথে এগিয়ে না যাবে, ততদিন উন্নয়ন সম্ভব নয়।
এ সময় বক্তারা নারীদের নিয়ে ঢাকা ক্রেডিটকে আরো বেশি কর্মকান্ড পরিচালনার আহ্বান জানান। ঢাকা ক্রেডিট বিভিন্ন প্রকল্প ও কর্মসংস্থান নিয়ে কাজ করছে। কিন্তু, নারীদের উন্নয়নে আরো কিছু উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। এ সময় তারা সম্মাননাপ্রাপ্ত নারীদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান।
এদিন মিউরিয়েল স্নেহা রোজারিও শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান, ফ্লোরেন্স গমেজ
শিক্ষা ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান, মার্থা গমেজ নারী উদ্যোক্তা, সুখলি কুবি নারী উদ্যোক্তা, মাধবী গমেজ নারী উদ্যোক্তা হিসেবে মোট পাঁচ জনকে সম্মাননায় ভূষিত করা হয়।
পাশাপাশি ঢাকা ক্রেডিটে বর্তমানে নেতৃত্বপ্রদানকারী পাঁচ জন নারী: ভাইস-প্রেসিডেন্ট পাপড়ি দেবী আরেং, বোর্ড অব ডিরেক্টর মনিকা গমেজ ও স্টেলা হাজরা, ক্রেডিট কমিটির চেয়ারম্যান উমা ম্যাগডেলিন গমেজ ও সুপারভাইজরি কমিটির সদস্য মারিয়া ডি’কুনাকে বিশেষভাবে শুভেচ্ছা জানানো হয়।
এদিন পর্যায়ক্রমে অতিথিবৃন্দ ও সম্মননাপ্রাপ্তদের বরণ ও শুভেচ্ছা প্রদান, প্রার্থনা, সম্মাননা প্রদান, সমিতির ব্যবস্থাপনা কমিটির নারীদের শুভেচ্ছা প্রদান এবং সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা অনুষ্ঠিত হয়। এদিন বাইবেল পাঠ ও প্রার্থনা করেন মারিয়া ডি’কুনা ও সিসিলিয়া রোজারিও।
শেষে সেক্রেটারি মাইকেল জন গমেজ ধন্যবাদ জানিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বোর্ড অব ডিরেক্টর মনিকা গমেজ ও স্টেলা হাজরা।
বিজ্ঞপ্তি